ওয়াজিদ খান
সুর,তাল,ছন্দ তাঁর জীবনের অঙ্গ ছিল। শঙ্কর-জয়কৃষণ, লক্ষ্মীকান্ত-প্যায়ারেলালের মতোই সাজিদ-ওয়াজিদ জুটি বেঁধে কণ্ঠসংগীত পরিচালনা করেছিলেন। ১ জুন সেই ওয়াজিদ খান মাত্র ৪১ বছর বয়সে মারা যান।
১৯৯৮ সালে আরবাজ খানের পরিচালনায় কাজল এবং সলমন খানের ‘প্যার কিয়া তো ডরনা কেয়া’ দিয়ে চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে অভিষেক হয় সাজিদ-ওয়াজিদের। সম্প্রতি এই দুই ভাই সলমান খানের দুটি মিউজিক ভিডিয়ো পেয়ার করোনা ও ভাই-ভাই এর গানের গীতিকার হিসেবেও কাজ করেন।
এছাড়াও এই জুটি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে গান লিখেছেন, যেমন ‘ক্যায়া অ্যায়হি প্যায়ার হ্যায়’ (২০০২), ‘গুনাহ’ (২০০২), ‘চোরি চোরি’ (২০০৩), ‘দ্য কিলার’ (২০০৬), ‘শাদি কারকে ফাস গায়ে ইয়ার’ (২০০৬), ‘জানে হোগা ক্যায়া’ (২০০৬) এবং ‘কাল কিসনে দেখা’। এছাড়াও তাঁরা সলমান খান অভিনীত বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেছেন। যেমন ‘তুমকো না ভুল পায়েঙ্গে’ (২০০২), ‘তেরে নাম’ (২০০৩), ‘গর্ব: প্রাইড অ্যান্ড অনার’ (২০০৪), ‘মুঝসে শাদি কারোগি’ (২০০৪), ‘পার্টনার’ (২০০৭), ‘হ্যালো’ (২০০৮), ‘গড তুসি গ্রেট হো’ (২০০৮), ‘ওয়ান্টেড’ (২০০৯), ‘ম্যায় অউর মিসেস খান্না’ (২০০৯), ‘বীর’ (২০১০), ‘দাবাং’ (২০১০), ‘নো প্রবলেম’ (২০১০) এবং ‘এক থা টাইগার’ (২০১২ শুধুমাত্র ‘মাশায়াল্লাহ’)। এইভাবেই একের পর এক হিট গান উপহার দিয়ে গেছেন আপামর শ্রোতাকে।
***
চিরঞ্জীবী
৭ জুন ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয় জনপ্রিয় কন্নড় অভিনেতা চিরঞ্জীবী সারজার। চিকিৎসকদের কোনও চেষ্টা করার সুযোগও দেননি তিনি। বুকে যন্ত্রণা শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চলে যান ৩৯ বছরের অভিনেতা।
শিল্পী পরিবারের সন্তান ছিলেন চিরঞ্জীবী। তাঁর দাদু ছিলেন বিখ্যাত কন্নড় অভিনেতা শক্তি প্রসাদ। অর্জুন সারজার ভাইপো ছিলেন চিরঞ্জীবী। সেই হিসাবে তাঁর রক্তে ছিল অভিনয়। ২০০৯ সালে ‘বায়ুপুত্র’ সিনেমার মধ্যে দিয়ে অভিনয় জগতে পা রেখেছিলেন চিরঞ্জীবী। খুব তাড়াতাড়ি কন্নড় ইন্ডাস্ট্রিতে জনপ্রিয়তা পান এই অভিনেতা। এরপর একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। চিরু, সিঙ্গরা, আম্মা আই লাভ ইউ, আটাগারার মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন চিরঞ্জীবী। ‘রাজা মারঠান্ডা’-র কাজ শেষ করে যেতে পারেননি তিনি। মোট ২২ টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ২০১৮ সালে অভিনেত্রী মেঘনা রাজকে বিয়ে করেন চিরঞ্জীবী।
***
সুশান্ত সিং রাজপুত
১৪ জুন মুম্বইয়ের বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় বলিউডের প্রতিভাবান অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের ঝুলন্ত দেহ। বেডরুমের সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছিল সুশান্তের দেহ। তবে কোনও সুইসাইড নোট রেখে যাননি তিনি।
ঘটনার তদন্তে নামে বান্দ্রা পুলিশ। মৃত্যুর কারণ খোঁজা শুরু হয়। জানা যায়, বেশ কয়েকমাস ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। মনোবিদের কাছে যেতেন নিয়মিত। অভিনেতার রহস্যমৃত্যুতে বলিউডের বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় পরিচালক-প্রযোজক, অভিনেতা-অভিনেত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়। বয়ান রেকর্ড করা হয় সুশান্তের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীর। সুশান্তের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, বাড়ির পরিচারক, পরিবারের সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বান্দ্রা পুলিশ জানায়, অবসাদ থেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন অভিনেতা। তবে অনেকেই মানতে নারাজ সুশান্ত আত্মহত্যা করেছেন।
এদিকে সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার পর বলিউডের স্বজনপোষণ নিয়ে সরব হয় সোশ্যাল মিডিয়া ও বলিউডেরই একাংশ। করণ জোহর, মহেশ ভাট, আলিয়া ভাট, সোনম কাপুর-সহ বেশ কিছু অভিনেত্রী-পরিচালক ও প্রযোজকদের রোষের মুখে পড়তে হয়। সোশ্যাল মিডিয়া ভরে ওঠে স্বজনপোষণের বিরোধিতায়। সুশান্ত ঘনিষ্ঠরা দাবি করে, যশরাজ ব্যানারে তিনটি ছবি করার চুক্তি থাকলেও সুশান্তের সঙ্গে একটা ছবি করার পর সেই চুক্তি ভেঙে দেওয়া হয়।
প্রতিভাবান অভিনেতা হওয়া সত্ত্বেও তেমন ছবি হাতে ছিল না সুশান্তের, কাজ না থাকায় অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। মৃত্যুর পিছনে দায়ী করা হয় অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তীকে। পাটনা পুলিশের কাছে সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা ও প্রয়াত অভিনেতার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ জানান সুশান্তের বাবা। বিহার পুলিশের হাত থেকে সেই তদন্ত যায় ইডির কাছে। ইডি দফতরে ডাক পড়ে রিয়ার। তবে অভিযোগ মতো ১৫ কোটি টাকার কোনও লেনদেনের প্রমাণ মেলেনি সুশান্তের অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে। এদিকে ছেলের মৃত্যুর বিচার চেয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি করেন অভিনেতার বাবা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সুশান্ত সিং রাজপুতের রহস্যমৃত্যুর মামলার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। সিবিআই ও ইডির তদন্তে রিয়াদের মাদক যোগের বিষয় উঠে আসে। ইডির হাতে আসে একটি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট, যেখানে রিয়া, সুশান্ত ও তাঁদের বন্ধুবান্ধবরা মাদক নিয়ে আলোচনা করেছেন। মাদক যোগের অভিযোগে রিয়া চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করে নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো। এরপর মাদক কাণ্ডে একে একে নাম জড়ায় দীপিকা পাড়ুকোন, শ্রদ্ধা কাপুর, সারা আলি খান, রাহুলপ্রীত সিংয়ের। এঁদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এনসিবি। তদন্ত এখনও চলছে। জামিনে ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন রিয়া চক্রবর্তী। এদিকে সিবিআইও জানিয়ে দিয়েছে– খুন বা ষড়যন্ত্র নয়, অভিনেতা আত্মহত্যাই করেছেন।
‘কাই পো চে’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। তারপর ‘এম এস ধোনি’, ‘শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স’, ‘রাবতা’, ‘পিকে’, ‘কেদারনাথ’, ‘ছিচোঁড়ে’-তে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সুশান্তের অভিনয় একাধিকবার মন কেড়েছে দর্শকদের। অভিনেতার শেষ ছবি দিল ‘বেচারা’, যা মুক্তি পেয়েছে তাঁর মৃত্যুর পর।