দেবস্মিতা
শীতের আলসেমি কাটিয়ে সবে ঘুম ভাঙছে মহানগরের। চা বানাবে বলে কোথাও সদ্য উনুনে আঁচ ধরিয়েছে দোকানি, আবার কোনও প্রান্তে একটা-দুটো বাস ছুটে চলেছে গুটিকতক যাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে। ঠিক এই সময়েই শহরের মধ্য প্রান্তে বসে গিয়েছে আস্ত একটা খাবারের বাজার! আর এই বাজারের বিশেষত্বই হল এখানে মেলে হরেকরকম চিনা খাদ্যসম্ভার। সেন্ট্রাল মেট্রোর ঠিক বিপরীতে পোদ্দার কোর্ট সংলগ্ন অঞ্চলে প্রতিদিন ভোর ৫ টা থেকে বসে এই বাজার। এটি টেরিটি বাজার নামে পরিচিত।
চিনা খাবারের ব্রেকফাস্টের এই বাজারের ইতিহাস বহু পুরনো। ইয়াং দাইজাং নামে এক চিনা ব্যবসায়ী সর্বপ্রথম কলকাতা সংলগ্ন বজবজ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। তিনি সেখানে ভারতের প্রথম রিফাইন্ড হোয়াইট সুগার মিল চালু করেন। তাঁর সূত্র ধরেই দলে দলে চিনাদের এ অঞ্চলে আগমন ঘটে। পরবর্তী সময়ে তাঁর মৃত্যুতে সে মিল বন্ধ হয়ে গেলে চিনারা অন্নসংস্থানের তাগিদে কলকাতায় চলে আসেন। সেসময় তাঁরা আশ্রয় নেন ধর্মতলা সংলগ্ন অঞ্চলে।
সেই থেকে শুরু, এরপর চিনে প্রথম গৃহযুদ্ধ চলাকালীন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়েও নিরাপত্তার খোঁজে বহু চিনা নাগরিক কলকাতায় পাড়ি জমান। এভাবেই কলকাতায় চিনাদের আবাসস্থল হয়ে ওঠে ওই অঞ্চল। এই চিনেবাজারের নামকরণ হয় এক ইতালিয়ান আর্কিটেকচার এদুয়ারদো টিরেটার নাম অনুসারে। যে অঞ্চলে এই টেরিটি বাজার গড়ে ওঠে তা ওই ভদ্রলোকের সম্পত্তি ছিল। বেশ কিছুকাল পরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই অঞ্চলের নাম রাখে তাঁর নামে।
বাজারে প্রবেশ করতেই ভেসে আসবে নানারকম চাইনিজ খাবারের গন্ধ। চিকেন মোমো, পর্ক মোমো, প্রন সুই মাই, চিকেন পাও, ডাম্পলিং, ওয়ানটন প্রভৃতি রকমারি সুস্বাদু চাইনিজ খাবারের সারি সারি পসরা সাজিয়ে বসে আছেন চিনেরা।
সপ্তাহের প্রতিদিন এই বাজার বসলেও শনি ও রবিবার খাবারের পদ থাকে বেশি। শহরের সর্বত্র চাইনিজ খাবারের রেস্তোরাঁ পাওয়া গেলেও এখানকার প্রধান আকর্ষণ স্বল্পমূল্যে চিনা খাবার। ক্রেতা হিসেবে চিনেদের পাশাপাশি দেখা মিলবে বাঙালিদেরও। কলকাতায় থেকে চিনে খাবারের স্বাদ আস্বাদন করতে চাইলে কোনও এক সকালে ঢুঁ মারতে পারেন এখানে।