চুনী গোস্বামী
ভারতীয় ফুটবলের আকাশে নক্ষত্র পতন ঘটে ৩০ এপ্রিল। প্রয়াত হন কিংবদন্তি ফুটবলার চুনী গোস্বামী। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি।
১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন চুনী গোস্বামী। ১৯৪৬ সালে মোহনবাগানের জুনিয়র দলে হয়ে খেলা শুরু করেন। ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ছিলেন সবুজ-মেরুনের জুনিয়র দলে। তারপর ১৯৬৮ পর্যন্ত খেলেছেন বাগানের মূল দলে। মূলত স্ট্রাইকার ছিলেন তিনি। বাগানের অধিনায়কও হয়েছিলেন। তাঁর অধিনায়কত্বে মোহনবাগান ডুরান্ড কাপ-সহ বহু প্রতিযোগিতায় ভালো ফল করেছিল। ১৯৬২ সালে চুনী গোস্বামীর অধিনায়কত্বে এশিয়ান গেমসে সোনা জেতে ভারতীয় ফুটবল দল। জয়। ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল ভারত। স্ট্রাইকার হিসেবে ৫০টি আন্তর্জাতিক ফুটব্যাল ম্যাচ খেলেছিলেন চুনী।
ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটেও তিনি ছিলেন সামান পারদর্শী। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফিও খেলেছেন চুনী গোস্বামী। ১৯৭১-৭২-এ তাঁর নেতৃত্বে রঞ্জি ফাইনালে পৌঁছেছিল বাংলা। বেশ কিছু পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন এই কিংবদন্তি। ১৯৬৩ সালে অর্জুন পুরস্কার, ১৯৮৩ সালে পদ্মশ্রী এবং ২০০৫ সালে মোহনবাগান রত্ন পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় চুনী গোস্বামীকে।
***
ইরফান খান
২৯ জুন প্রতিভাবান অভিনেতা ইরফান খানকে হারিয়েছি আমরা। ১৯৬৭ সালে রাজস্থানের এক গরিব পরিবারে জন্ম ইরফান খানের। তাঁর বাবার টায়ারের ছোট ব্যাবসা ছিল। ছোটবেলায় অভিনয় নয়, ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। বন্ধু সতীশ শর্মার অনুপ্রেরণা এবং সাহায্যে বহু ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন। সুযোগ পেয়েছিলেন ফার্স্ট ডিভিশনে খেলারও। কিন্তু অর্থের অভাবে শেষ পর্যন্ত তাতে যোগ দিতে পারেননি। ওই সময়েই অভিনয়ের নেশা তাঁকে পেয়ে বসে। সেইজন্যই চলে আসেন মুম্বইয়ে। শুরু হয় নতুন লড়াই।
অভিনয়ের স্বপ্ন নিয়ে বহু ভারতীয় তরুণ-তরুণী মুম্বইয়ে যান। কিন্তু কঠিন লড়াইয়ে টিকে থাকতে পারেন না সকলে। ইরফান এক-দুই বছর নয়, দশকের পর দশক লড়াই করেছেন। বিভিন্ন সিরিয়ালে নিতান্তই ছোট রোল পেয়েছেন। সিনেমায় অভিনয়ের জন্য প্রথম দিকে অল্প টাকা উপার্জন করেছেন। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি টেলি ছবি আর সিরিয়ালে তাঁর অভিনয় দর্শক এবং ফিল্ম বোদ্ধাদের নজর কাড়ে। তাঁর অভিনয়ের দ্বারা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে তাঁর ক্ষমতা।
অবশেষে ২০০১ সালে ব্রিটিশ ছবি ‘দ্য ওয়ারিয়র’-এ মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান ইরফান। তার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ‘মকবুল’, ‘লাইফ ইন আ মেট্রো’, ‘নেমসেক’, ‘পান সিং তোমর’ অভিনয় করে ইরফান বুঝিয়ে দেন তাঁর অভিনয়ের মান ঠিক কতটা উন্নত। এছাড়া বিদেশি ছবি ‘লাইফ অফ পাই’ ও ’স্লামডগ মিলিয়নেয়ার’-এ অভিনয় করে পুরস্কারও ভরে ওঠে। জাতীয় পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার তো আছেই, একই সঙ্গে পদ্মসম্মানও প্রদান করা হয় তাঁকে।
২০১৮ সাল থেকে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি। এমনকী বহু মানুষের প্রার্থনায় এবং চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টায় সেরেও উঠেছিলেন ক্রমশ। তবে বিধির লিখন কেইবা খণ্ডাতে পারে! সকলের আবেগ আর ভালোবাসাকে সঙ্গী করেই চলে যেতে হল তাঁকে।
***
ঋষি কাপুর
৩০ এপ্রিল মৃত্যু হল কিংবদন্তি অভিনেতা ঋষি কাপুরের। মুম্বইয়ের স্যার এইচএন রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনে ঋষি কাপুরের মৃত্যুর সঙ্গে সমাপ্ত হল আরও একটা অধ্যায়ের। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।
‘মেরা নাম জোকার‘ দিয়ে অভিনয় জীবনের শুরু। এরপর
‘ববি‘, ‘খেল খেল মে‘, ‘অমর আকবর অ্যান্টনি‘, ‘ইয়ে বাদা রাহা‘, ‘লায়লা মজনু‘, ‘প্রেম রোগ‘, ‘কর্জ, বোল রাধা বোল‘, ‘চাঁদনি‘, ‘নাগিনা‘, ‘সরগম‘, ‘দিওয়ানা‘, ‘কাপুর অ্যান্ড সনস‘, ‘অগ্নিপথ‘, ‘নসিব‘, ‘দামিনী‘-সহ একাধিক ছবিতে রোম্যান্টিক হিরোর পাশাপাশি খল নায়কের চরিত্রেও দেখা গিয়েছে ঋষি কাপুরকে। জিতু জোসেফের ‘দ্য বডি‘ ছবিতে শেষ দেখা যায় তাঁকে।
তাঁর মৃত্যুতে অমিতাভ বচ্চন, সলমন খান, আমির খান, করণ জোহর, অক্ষয় খান্না থেকে শুরু করে একাধিক ব্যক্তিত্বের শোকবার্তায় ভরে যায় সোশ্যাল মিডিয়ার পেজ।
২০১৮ সালে প্রথম তাঁর ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর সামনে আসে। এরপর টানা ১ বছর নিউ ইয়র্কে চিকিৎসা চলে তাঁর। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ৬৭ বছর বয়সেই থমকে গেল রুপোলি জগতের অসামান্য এই অভিনেতার জীবন।