নারায়ণ দে
দিল্লিতে কৃষক আন্দোলনের চার মাস এক সপ্তাহ দু’দিনের মাথায় দেশের কোনও এক কোণের এক বিরাট মাপের কৃষক নেতা যোগ দিলেন কৃষক আন্দোলন বিরোধী মঞ্চে! বর্তমানে এমনটাই বলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। একদিকে যখন দেশের রাজধানীতে তীব্র হচ্ছে কৃষক আন্দোলন, তখনই দেশের আন্দোলনের আঁতুড়ঘর মেদিনীপুরে কেন্দ্রের শাসকদলে নাম লেখালেন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেতা শুভেন্দু অধিকারী। এমন দৃশ্যও দেখা বাকি ছিল!
নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। সম্প্রতি এমনটা নিজেও বিভিন্ন অরাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে দাবি করেছেন তিনি। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ। ওইদিন বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ‘‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’র ১৪ জন সদস্য। যে কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ শিশির অধিকারী। যুগ্মসচিব ছিলেন এসইউসিআই নেতা নন্দ পাত্র। নন্দীগ্রাম আন্দোলনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন তৃণমূলের শেখ সুফিয়ান। তিনি এখন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি। তিনি জানালেন, ‘শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কিছু মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই আন্দোলন, তা মোটেই নয়। তিনি বিজেপি যাওয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের কোনও ক্ষতি হয়নি। বরং এবার ভোট আরও বাড়বে।’’
‘১৩ বছর পর নন্দীগ্রামের কথা মনে পড়েছে?’ সম্প্রতি নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে তৃণমূলকে এ ভাষাতে বিঁধেছিলেন তিনি। সভা করেছিলেন ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’র ব্যানারে। কিন্তু তিনি বিজেপিতে যোগদানের পর নন্দীগ্রামবাসীই প্রশ্ন তুলছেন, ‘দাদা কি নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কথা ভুলে গেলেন?’ ঘটনার সূত্রপাত ঠিক এরকম, রাজ্যে কেমিক্যাল হাব তৈরির জন্য নন্দীগ্রামের ১০ হাজার একর জমি রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করবে। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের তরফে এই মর্মে নোটিস পড়তেই সংগঠিত হন কৃষকরা। ২০০৭ সালের ৫ জানুয়ারি এই অঞ্চলের তিনটি সেজ-বিরোধী সংগঠন যৌথভাবে আন্দোলন পরিচালনার লক্ষে একত্রিত হয়ে ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’ গড়ে তোলেন। যেখানে কংগ্রেস ও তৃণমূলের পাশাপাশি বামেদের সংগঠন এসইউসিআইও ছিল। কমিটির নেতৃত্ব দিতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিচালনা করতেন শিশির অধিকারী। ‘শুভেন্দু অধিকারী ওই আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন, কৃষকদের স্বার্থে তৎকালীন বাম সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে শিখিয়েছিলেন’, অকপটে স্বীকারোক্তি এক গ্রামবাসীর।
যিনি কিনা নিজেই কৃষক আন্দোলনের নেতা হিসােব উঠে এল রাজনীতিতে, আজ তিনিই কিনা রাজনীতির জন্যই কৃষক আন্দোলন বিরোধী মঞ্চে গিয়ে দাঁড়ালেন। ক্ষোভ মেদিনীপুরের কৃষকদের। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার নতুন যে তিনটি কৃষি আইন এনেছে, তা কৃষক স্বার্থবিরোধী। তাই প্রায় সাড়ে চার মাস ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছেন লক্ষ লক্ষ কৃষক। শনিবার অমিত শাহকে ঘিরেও বিক্ষোভের পরিকল্পনা ছিল। তবে পুলিশি তৎপরতায় যা ভেস্তে গিয়েছে বলে দাবি করলেন কলেজ মাঠ সংলগ্ন কৃষকরা। তাঁরাই আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘‘দাদার ওপর বিশ্বাস ছিল, ভেবেছিলাম হয়তো তিনিও কেন্দ্রের এই কৃষক বিরোধী আইনের প্রতিবাদ করবেন। কিন্তু করলেন উল্টোটাই।’’